Saturday , May 18 2024
Breaking News

কিশোরগঞ্জে ২ টাকায় ব্যাগভর্তি পণ্য পেল হতদরিদ্র ৪০০ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অকালে স্বামী হারিয়েছেন প্রতিবন্ধী রোজিনা আক্তার (৫০)। শহরের তারাপাশায় ছোটবোন রোকেয়ার কাছে থাকেন। টুকটাক কাজকর্ম করে যে আয়দায় হয়, তা দিয়ে দুবোনের সংসার চলে না, ধারকর্জ করতে হয়। তাই ঈদ চলে এলেও ঈদেও কেনাকাটা, বাজারসওদা করা হয়নি তাদের।

হতদরিদ্র এই দুই নারীকের আজ সোমবার আমন্ত্রণ জানানো হয় ২টাকার ঈদ আনন্দ বাজারে। সেখান থেকে তারা ২টাকার বিনিময়ে ব্যাগভর্তি বাজার করেছেন। এতে দুই ধরণের চাল, তেল, দুধ, সেমাই, লবন, চিনি ও পরণের নতুন শাড়ীসহ ১১ প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মিলেছে। ঈদসহ অন্তত এক সপ্তাহের খাবার পেয়ে তাদের মলিনমুখে অনেকদিন পর হাসি ফুটেছে।

রোজিনা কিংবা রোকেয়ার মতো যারা উচ্চমূল্যের বাজারে ঈদের একেবারে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কিনতে পারছিলেন না, ঈদের দিনটি কীভাবে কাটবে, চিন্তায় অস্থির ছিলেন-তাদের কথা ভেবে আয়োজন করা হয়, এই ঈদ বাজারের। কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এনায়েত করিম অমি ২টাকার বাজারের উদ্যোক্তা। এতে সহযোগিতা দেয় আব্দুল করিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।

কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়ার বিন্নগাঁও এলাকায় তাঁর বাসার সামনে একটি ভবনের নিচে খোলা জায়গায় এ ব্যতিক্রমধর্মী বাজারের আয়োজটি করা হয়। কোনো ধরণের আনুষ্ঠানিকতা বা বক্তৃতাবাজি ছাড়াই বেলা দেড়টার দিকে অভাবী লোকজনের জন্য খুলে দেওয়া হয় এ বাজার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শুরুতেই লোকজন বাজরের ফ্রন্টডেস্কে গিয়ে ২টাকা করে পরিশোধ করছেন। পরে তাদের হাতে একটি করে ব্যাগ ধরিয়ে দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকরা। এরপর তাদের মূল বাজরে প্রবেশে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। সবাই নিজহাতে বিভিন্ন টেবিলে সাজানো পণ্যগুলো ব্যাগে ভরে চলে যাচ্ছেন। এভাবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে এ ব্যতিক্রমী বাজারের কার্যক্রম।

শহরতলীর চংশোলাকিয়া গ্রামের হাদিস মিয়া জানালেন, ২টাকায় আজকাল কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু তারা আজ ২টাকা দিয়ে ব্যাগভরে বাজার করেছেন। এতে বেশ অবাক ও আনন্দ পেয়েছেন তারা। ঈদের আগে এ সহযোগিতাটুকু কাজে লাগবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আয়োজকরা জানিয়েছে, প্রথমে স্বেচ্ছাসেবকরা শহরের বিভিন্ন এলাকার একেবারে গরিব লোকদের বাছাই করে। পরে তাদের হাতে ২টাকার বাজারের আমন্ত্রণপত্র তোলে দেওয়া হয়। যারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সবাই বাজারে এসে পণ্য কিনেছেন। মোটামুটি আনন্দঘন পরিবেশে চলে কার্যক্রম। ৪০০ নারী-পুরুষ বাজার থেকে পণ্য কেনার সুবিধা পান।

ঈদ আনন্দ বাজারের আয়োজক এনায়েত করিম অমি বলেন, উচ্চমূল্যের বাজারে অনেক গরিব পরিবার আছে, যারা ঈদের প্রয়োজনীয় বাজারটুকু করতে পারেনি। মূলত তাদের কথা ভেবে ২টাকার বাজারের আয়োজন। এটি দানদক্ষিণার কোনো বাজার নয়, লোকজন জিনিসপত্র এখান থেকে কিনে নিয়েছে। আমার আহŸান থাকবে এ ধরণের উদ্যোগ যেন ছড়িয়ে পড়ে, সামর্থবানরা যদি জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসে তাহলে দেশের দরিদ্র লোকজন অনেকটাই স্বস্তি পাবে।

তিনি জানান, বাজারে উপস্থিত প্রতিটি লোককে তার পরিবারের জন্য এক কেজি পোলাও চাল, তিন কেজি সাধারণ চাল, এক প্যাকেট সেমাই, এক কেজি চিনি, আধা লিটার সোয়াবিন তেল, এক কেজি ডাল, এক প্যাকেট লবন, এক প্যাকেট দুধ, একটি সাবান, একটি শ্যাম্পু ও নারীদের জন্য একটি নতুন শাড়ি আর পুরুষদের জন্য একটি করে লুঙ্গি রাখা হয়।

About admin

Check Also

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ কিশোরগঞ্জে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে জেলায় গড় পাসের হার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *