নিজেস্ব প্রতিবেদক
ছাত্রলীগ নেতা মুখলেছ উদ্দিন ভূইয়ার (২৫ ) ছেলেবেলার বন্ধু মিজান শেখ (২৮)। গত ২৯ মার্চ রমজানে একসঙ্গে পাগলা মসজিদে তারাবি নামাজ পড়েন তারা। এরপর মিজান শেখ মুখলেছের বাসায় গিয়ে বন্ধুর সঙ্গে রাতের খাবার খান। মধ্যরাতে কৌশলে বন্ধু মুখলেছকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হয় মিজান। সে ছাত্রলীগ নেতাকে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন মুক্ত মঞ্চের কাছে নিয়ে যায়। আর সেখানে অপেক্ষমান সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করে মুখলেছকে। হত্যাকারীরা তার লাশ সিমেন্টের ব্লকে বেঁধে নরসুন্দা নদীতে ডুবিয়ে দেয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার সময় সেই লাশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে পুলিশ।
ছাত্রলীগ নেতা নিখোঁজের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান সন্দেহভাজন মিজান শেখের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গত সোমবার থেকে নরসুন্দা নদীতে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। প্রথম দিনে তারা নদীতে কোন লাশ পায়নি। মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে নিহতের লুঙ্গি, লঙ্গিতে বাঁধা ভাড়া বাসার চাবি ও একটি ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর অভিযান বেগবান করা হলে ঘন্টাখানিক পর নিহত মুখলেছের গলিত দেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় লাশে ইট সিমেন্টের ব্লক বাঁধা অবস্থায় ছিল। লাশ উদ্ধারের সময় হাজার হাজার মানুষ নদীর পাড়ে ভিড় জমায়।
পুলিশ জানায়, মুখলেছ ও মিজান শেখ গত ২৯ মার্চ রমজানে একসঙ্গে পাগলা মসজিদে তারাবি নামাজ আদায় করে। এরপর মুখলেছ তার বাসায় বন্ধুকে নিয়ে রাতের খাবার খান। মধ্যরাতে কৌশলে মুখলেছকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বের হয় মিজান। সে ছাত্রলীগ নেতাকে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল কলেজসংলগ্ন মুক্ত মঞ্চের কাছে নিয়ে যায়। আর সেখানে অপেক্ষমান সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয় মুখলেছকে। হত্যাকারীরা তার লাশ সিমেন্টের ব্লকে বেঁধে নরসুন্দা নদীতে ডুবিয়ে দেয়।
মুখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়া জেলার মিঠামইন উপজেলার কেউ আরজোর কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি তার ইউনিয়নে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি জেলা জজ আদালতে একজন আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুখলেছ শহরের হারুয়া বউবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। অন্যদিকে সন্দেহভাজন ঘাতক মিজান শেখ মিঠামইনের ফুলপুর গ্রামের সেফুল শেখের ছেলে। এই ঘটনায় পুলিশ মিজান শেখের বাবাসহ তার ছোট দুই ভাই মারজান শেখ ( ২৬) ও রায়হান শেখকেও (২১) আটক করেছে। তাদের হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তগঞ্জ থেকে ধরা হয়। পারিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
লাশ উদ্ধারের পর বিকেলে নরসুন্দা নদীর পাড়ে কথা হয় হত মুখলেছের ভাই মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান। নিখোঁজের ঘটনায় গত ৩১ মার্চ একটি জিডি করেন মিজানুর রহমান। এরপর নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে নিখুঁজের রাতের হারুয়া এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করা হয়। ওই সিসিটিভি ফুটেজে নিহত মুগলেছের সঙ্গে মিজান শেখকেও দেখা যায়। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত জোরদার করে পুলিশ। এর ধারাবাহিকতায় থানায় একটি অপহরণ ও গুমের মামলা দায়ের করা হয়। গত শনিবার হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মিজান শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সঙ্গে আটক করা হয় তার বাবা ও ছোট দুই ভাইকে।
গ্রেপ্তার মিজান শেখ পরিকল্পিতভাবে তার বন্ধুকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মুখলেছকে জবাই করে শরীর থেকে মাথা আলাদা করার পর পেট ছিড়ে ফেলা হয়। যেন লাশ ভেসে না উঠে। তাছাড়া লাশের সাথে ইট-সিমেন্টের সিসি ব্লক বেঁধে দেওয়া হয়।
ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার মিজান শেখকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, গ্রেপ্তার মিজান হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম বলেছে। তবে পুলিশ এগুলো যাচাইবাছাই ও তদন্ত করে দেখছে। মিজান শেখে পরিবারের অন্য আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।